Daily News BD Online

নিকলীতে দিন হাজিরায় মানুষ যেখানে বিক্রি হয়


মোঃ হাবিব মিয়া, নিকলী (কিশোরগঞ্জ) :


সূর্য উঠার আগে থেকেই অভাবী লোকজন ছুটে এসেছেন হাটে। চোখে-মুখে তাদের অসহায়তার ছাপ। হাটটিতে এক শ্রেণির মানুষ আসেন ‘বিক্রি’ হতে আরেক শ্রেণির মানুষ আসানে কিনতে। চলতে থাকে দরদাম, পণ্যের দামের মতোই ওঠা ও নামা করে।


কিশোরগঞ্জের নিকলীর স্থানীয় ভাষায় কেউ তাদের বলে দাওয়ালী, কেউ বলে মুনি, ভদ্র ভাষায় অনেকে ডাকেন কৃষি শ্রমিক বলে। এখন চলছে বোরো ধান কাটার মৌসুম এ সময় নিকলীর বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষি শ্রমিকরা এসে শ্রমিকের হাটে বসে।

বিশেষ করে উপজেলার সদর ইউনিয়নের কালীবাড়ি বটতলা ও গরুচরা ঘাটে শ্রমিকদের বেচাকেনা চলে।

শনিবার (২৯ এপ্রিল) সকালে সরজমিনে নিকলী শ্রমিকের হাট ঘুরে দেখা গেছে, নিকলী, জারুইতলা, মামুদপুর, করগাঁও, পূর্বগ্রাম, চামারঠুলা, কুর্শা, পাঁচরুখীসহ বিভিন্ন গ্রামের অভাবী লোকজন এসেছেন কাজের সন্ধানে। এ মৌসুমে নিকলীসহ কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে কৃষি শ্রমিকের চাহিদা বেশি। ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত চলে এ শ্রমিকের হাট। কেউ ‘বিক্রি’ হন একদিনের জন্য, কেউ পাচঁদিন, কেউ সাতদিন, কেউ আবার ১০ দিনের জন্য।

দূর থেকে যারা এ হাটে আসেন তারা বেশি দিনের জন্য আর স্থানীয় শ্রমিকরা প্রতিদিনের জন্য ‘বিক্রি’ হচ্ছেন।

এ অঞ্চলে বোরো ধান কাটা শুরু হওয়ায় শ্রমিকের হাট ও জমে উঠেছে। বর্তমানে ১১শ থেকে ১২শ টাকায় প্রতিদিন হিসেবে শ্রম বিক্রি হচ্ছে।

কালীবাড়ী বটতলা ও গরুচরা ঘাটে শ্রমিকের হাটে কথা হয় মামুদ গ্রামের মগবুল মিয়া (৫০), সাইফুল (৩২), কাজল (২৯) ও নুরু মিয়া (৩৮) তারা বলেন, আমাদের এলাকায় এখন কাজ নেই। কেউ আট সদস্য, কেউ সাত সদস্য, কেউ ১০ সদস্য পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। প্রতি বছরই এ সময়ে তারা নিকলী বটতলা ঘাটে আসে ধান কাটার জন্য। এ সময় শ্রমিকের দাম বেশি থাকে। এক মাস কাজ করলে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারি।

করগাঁও গ্রামের লোকমান, ৫২ বছরের জয়নাল জানান, এখন গৃহকর্তারা তাদের মানুষ মনে করেন না। একটু বিরাম দিতে চান না। পারলে তো ২৪ ঘণ্টাই খাটাতে চান। অথচ বউ ও বাচ্চা সব ফেলে আমরা কাজ করতে এ এলাকায় এসেছি।

তারা বলেন, বাজারে চাল ৬০ টাকা আর একজন কৃষি শ্রমিক সারা দিন হার ভাঙা পরিশ্রম করে পায় ১১শ টাকা এটা হতে পারে না। তবে মালিক পক্ষের অভিযোগও কম নয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন