Daily News BD Online

নওগাঁ নিয়ামপুরে এক মেয়ের দুই স্বামী


এ.বি.এম.হাবিব :

নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের লতিফপুর গ্রামের শাহাবুদ্দিনের মেয়ে নেহার বর্তমানে দুই স্বামী। এ নিয়ে এলাকায় বিশাল চাঞ্চল্যে সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উক্ত গ্রামের শাহাবুদ্দিনের মেয়ে নেহা ১০ম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় পার্শবর্তী মোহনপুর থানার সহিপুর গ্রামের আফজাল দেওয়ানের ছেলে মো.সুমনের সাথে ফেইসবুকে পরিচয় হয়। তারপর ওয়াটসআপ,ইমুতে কথা হয়, এরপর দেখা সাক্ষাত এভাবে প্রায় দুই বছর চুটিয়ে তারা প্রেম করে। নেহা এসএসসি পাশ করার পর, কলেজে ভর্তি হওয়ার আগেই তার বাবা শাহাবুদ্দিন পাত্র খুঁজতে শুরু করলে, প্রায় দুই বছর প্রেম এবং বহুকিছু হওয়ার কারণে নেহা সিদ্ধান্ত নেয় যে,যার সাথে এতোদিন সম্পর্ক করেছে তাকেই সে বিয়ে করবে। এভাবে সে গত ২১/৬/২৩ ইং তারিখে ঘর থেকে পালিয়ে সুমনের কাছে যায় এবং সেখানে ২২/৬/২৩ইং তারিখে কোর্ট এফিডেফিট করে বিয়ে রেজিস্ট্রার করে,ঘর সংসার শুরু করে।

 প্রায় ৬//৭ দিন যাওয়ার পর নেহার বাবা-মা সুমনের পরিবারে গিয়ে বলে,তারা আনুষ্ঠানিক ভাবে ধুম-ধাম করে, আত্নীয়-স্বজনের উপস্থিতিতে বিয়ের পরবর্তী কাজ সম্পূর্ন করবেন। এগুলো বিভিন্ন কথা বলে তাদের মেয়ে নেহাকে নিয়ে যায় এবং নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক আটকিয়ে রাখে বলে প্রথম স্বামী  সুমন অভিযোগ করেন। এরপর কিছু দিন অতিবাহিত হয়ে যায়। মেয়ের পরিবার থেকে কোন প্রকার যোগাযোগ,না করলে ছেলের আত্নীয়-স্বজনেরা মেয়ের বাড়ীতে গেলে, মেয়ের বাবা-মা বিয়ে অস্বীকার করে, ছেলের আত্নীয়-স্বজনদের মান-অপমান করে। এতে ছেলে পক্ষ তৃতীয় মাধ্যম দ্বারাও যোগাযোগ করতে থাকে কিন্তু কোন সুরাহা পায় না। এতে প্রায় দেড় মাস কেটে যায়।

গত ০৪/০৮/২০২৩ইং তারিখ রোজ শুক্রবার দিবাগত রাত্রীতে গোপনে সুমনের স্ত্রী নেহাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে,জোর-জবরদস্তি করে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে পার্শ্ববর্তী তানোর থানার কামারগাঁ ইউনিয়নের মাদারীপুর গ্রামের মুনছুর আলীর  ছেলে রায়হানের সাথে বিয়ে দেয় বলে সুমন অভিযোগ করেন। এতে বিষয়টি আশে-পাশের পাড়াসহ পুরো গ্রামে চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা জানায়, এতোদিন শোনা গেছে এক পুরুষ একাধিক বিয়ে করতে পারে কিন্তু শাহাবুদ্দিন তার আগের জামাইয়ের সাথে ছাড়া-আড়া না করে, তার মেয়েকে ২য় বিয়ে দেয় কেমন করে। বর্তমানে মেয়েটি দুটি স্বামী এতে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মতামত দিতে থাকে এলাকায়।

এ বিষয়ে মাদরীপুর গ্রামের মুনছুর আলীর বাড়ীতে গিয়ে জানতে চাইলে তিনিও তার স্ত্রী জানান, মেয়েটির আগের বিয়ের বিষয়টি গোপন রেখে তাদের ছেলের সাথে শাহাবুদ্দিন বিয়ে দিয়েছে। মেয়ের এতোদিন প্রেম-ভালোবাসা, বিয়ে সমন্ধে কিছুই তারা জানতো না। বিয়ের পর বউকে ঐ রাত্রীতে নিয়ে আসার পরেরদিন, এসব বিষয়ে জানতে পেরেছেন বলে তারা সাংবাদিকদের জানান। পরের দিনই শাহাবুদ্দিনকে ডেকে, তার মেয়েকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তার ছেলেও রাজশাহীতে চলে গিয়েছে।  কোথাকার কাজী দিয়ে, মেয়ের ২য় বিয়েটি পড়ানো হয়েছিলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজী তো শাহাবুদ্দিন এনেছিলো, কাজীকে তারা চিনেন না বলে জানান। নেহার ২য় স্বামী রায়হানের বাবা মুনছুর জানান, এ গুলো জানলে, পৃথীবীর কোন বাবাই তার ছেলেকে বিয়ে দিতো না। বর্তমানে কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, যেহেতু আমাদেরকে না জানিয়ে, ১ম বিয়ে গোপন রেখে আমাদের ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছে, তাই আগের ছেলে যদি, তার বউ নিয়ে যায়,এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই।  তার ছেলে রাজশাহীতে পড়াশুনা করছেন। বর্তমানে তাদের মন-মানষিকতা ভালো নেই,ছেলে বাড়ীতে আসলে তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান।

এ বিষয়ে শাহাবুদ্দিনের কাছে জানতে তার বাড়ীতে গিয়ে, না পেয়ে, মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি দুটো বিয়েই অস্বীকার করে বলেন,তার মেয়ের এখনো বিয়ের বয়স হয়নি। মাদারীপুরে যে ছেলের সাথে আপনার মেয়ে নেহাকে বিয়ে দিয়েছেন, রায়হানের বাবা মুনছুর ও ওখানকার লোকজন এবং আপনার বাড়ির আশে-পাশের লোকজন সবাইতো বলছে, আপনার মেয়েকে ২য় বিয়ে দিয়েছেন এবং নেহার প্রথম স্বামী সুমনও একটি লিখিত অভিযোগ করে বলেছেন, আপনি নেহাকে ২য় বিয়ে দিয়েছেন। বয়স না হলে, ২য় বার বিয়ে কিভাবে দিলেন, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে তিনি উত্তর না দিয়ে, অকত্য ভাষা ব্যাবহার করতে শুরু করেন এবং সাংবাদিককে ফোনে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে ফোন কেটে দেন।

অন্যদিকে নেহার প্রথম স্বামী সুমন, তার স্ত্রীকে পাওয়ার জন্য নওগাঁ এসপি অফিস এবং ডিসি অফিসে বিয়ের রেজিস্ট্রি,এভিডেভিড ও বিয়ের ছবি সহ একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, তার স্ত্রীকে নেওয়ার জন্য আত্নীয়-স্বজন,গ্রামের মন্ডল,মাতবর সকলের শরণাপন্ন হয়েছেন কিন্তু কোন কিছুই মানতে চাচ্ছেন না তার শশুড়। তিনি বলেন, শশুড়-শাশুড়ী অনুষ্ঠান করবে বলে প্রলোভন দিয়ে তার স্ত্রীকে নিয়ে গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে, জোর-জবরদস্তি করে অন্যত্র বিয়ে দিয়েছেন। এটি উনারা ঠিক করেন নাই। তিনি বলেন, তার স্ত্রী কখনোই অন্যত্র নিজ ইচ্ছায় বিয়ে হতে পারে না। প্রায় দুই বছরের প্রেম-ভালোবাসা অনেক স্মৃতি তারপর বিয়ে,একসাথে বেশ কয়েকদিন সংসার করেছি। আবার অন্যদিকে তার শশুড়, বেশী বাড়া-বাড়ী করলে তাকে মেরে ফেলে, লাশ গুম করে ফেলবে বলেও হুমকি দিয়েছে। তাই তিনি আইনের আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানান।
এ খবরটি লিখা পর্যন্ত এখনো এর কোন সুরাহা হয়নি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন