মানিকগঞ্জে জমি নিয়ে বিরোধ, হামলার পর মামলা না করতেও হুমকি

 

প্রতিবেশী শামসুলের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জাহাঙ্গীরের জমি-সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল | ছবি: সংগৃহীত

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামে জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে মো. জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী মোসা. রোজিনা আক্তারের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় গুরুতর আহত হয়ে জাহাঙ্গীর তিন দিন ধরে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। একই হাসপাতালে রোজিনাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে তাদের পুরো পরিবার।

আহতের ভাই সুমন জানান, শামসুল আমাদের পরিকল্পিতভাবে বসতবাড়ি দখল করে নেয়ার হুমকি দিচ্ছে। তাদের হামলার শিকার হয়ে আমার বড় ভাইয়ের মাথায় ১২টি সেলাই লেগেছে। ভাবিকেও অনেক মেরেছে। অসুস্থ ভাইকে হাসপাতালে নেয়ার পথেই আমাদের হুমকি দিয়েছে, থানায় মামলা করলে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেবে। এখন রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। পরিবার নিয়ে আতঙ্কে আছি।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৪ মে বিকেলে জাহাঙ্গীর আলম তার জমিতে মরিচ তুলছিলেন। এ সময় আসিফ, রিয়াদ, রাফিদসহ কয়েকজন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সেখানে গিয়ে গালিগালাজ শুরু করেন। প্রতিবাদ করলে তারা লোহার রড, কাঠের বাটাম ও চাপাতি দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। হামলায় জাহাঙ্গীরের মাথা ও দুই হাতে গুরুতর আঘাত লাগে। তার স্ত্রী রোজিনা আক্তার এগিয়ে গেলে তাকেও বেধড়ক মারধর করে হামলাকারীরা।

আহত জাহাঙ্গীর বলেন, ‘প্রতিবেশী শামসুলের সাথে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের জমি-সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। তারা আমাদের জমি দখলের চেষ্টা করছে। তারই জেরে শামসুল ও তার ছেলেদের নির্দেশে তাদের সহযোগীরা আমার উপর হামলা চালায়। হামলায় আমার মাথা ও দুই হাতে গুরুতর জখম হয়। তাকে উদ্ধার করতে আসলে তার স্ত্রী রোজিনাকেও বেদম মারপিট করা হয়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। মারধরের পরেও তারা হুমকি দিচ্ছে মামলা না করার জন্য। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

আহত জাহাঙ্গীর এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে হরিরামপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযুক্তরা হলেন—গালা ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামের নাঈম (২৮), আসিফ (৩২), শামসুল (৫৮), রিয়াদ (২২), রাফিদ (২৫) ও কান্দালংকা গ্রামের বাপ্পি (২১)।

স্থানীয়রা জানান, দুই পক্ষ জমির মালিকানা দাবি করলেও এলাকার সালিশে কাগজপত্র দেখে সিদ্ধান্ত হয় জমির প্রকৃত মালিক জাহাঙ্গীর। শামসুল সালিশের রায় না মেনে উল্টো তাদেরসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দেন। স্থানীয় আজিজ মোল্লা বলেন, ‘শামসুল একজন মামলাবাজ লোক, তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই তাদের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। তার মামলার হয়রানির শিকার এলাকার অনেকেই।’

অভিযুক্ত শামসুল আলম বলেন, ‘তাদের নামে যে অভিযোগ দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কে বা কারা তাদের মারধর করছে তা আমরা জানি না। আমি তাদের জমি দখল করছি না, উল্টো তারা আমাদের বসতবাড়ি বিভিন্ন লোকজনের প্রলোভনে জোরপূর্বক ভোগদখল করে রেখেছে।’

হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মমিন খান বলেন, ‘ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন