Artificial intelligence (AI) Pros And Cons কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা এবং অসুবিধা

Photo Credit : dem10 / Daily News BD

Artificial intelligence (AI) Pros And Cons

মো. সাইদুল ইসলাম :

Artificial intelligence (AI) বাংলায় “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা” এই প্রযুক্তির কারণে মানুষের জীবনে নেমে আসতে পারে ভয়ঙ্কর বিপদ! ইতিমধ্যেই মানুষের জীবনে শুরু হয়ে গেছে এর বিপরীত প্রভাব।  এআই প্রবেশের এই সময়ে অনেক কিছু হচ্ছে যার ফলে সত্য এবং বাস্তব ঘটনা বা তার ভিডিও অনেকেই মনে করছে এটা এআই তৈরী ভিডিও অথচ ওটাই বাস্তব এবং রিয়েল ভিডিও।  আবার এআই দিয়ে তৈরী ভিডিও কেউ কেউ মনে করছে এটা রিয়েল ভিডিও! চিন্তার এবং আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে এআই এবং রিয়েল এই সত্যতা যাচাই করতে করতে অনেকের জীবনে নেমে আসতে পারে ভয়ঙ্কর বিপদ।  মানুষ নিজেই নিজের জন্য ‘আত্মঘাতি’ হয়ে উঠার আশঙ্কা রয়েছে।  এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে সুবিধার চেয়ে অসুবিধাটাই বেশি হওয়ার সম্ভাবনা।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) আমাদের জীবনকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছে। এর যেমন অনেক সুবিধা আছে, তেমনি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। চলুন, সেগুলো জেনে নেওয়া যাক:


Photo Credit : XH4D / Daily News BD

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা (Advantages of AI)

  • স্বয়ংক্রিয়তা ও দক্ষতা বৃদ্ধি: AI বিভিন্ন জটিল ও পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করতে পারে, যা মানুষের সময় ও শ্রম বাঁচায়। যেমন, শিল্প কারখানায় রোবটের ব্যবহার উৎপাদন প্রক্রিয়াকে দ্রুত ও নির্ভুল করে তোলে।

  • দ্রুত এবং নির্ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ: AI বিশাল পরিমাণ ডেটা দ্রুত বিশ্লেষণ করে নির্ভুল সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম। স্বাস্থ্যসেবায় রোগ নির্ণয় বা আর্থিক খাতে প্রতারণা শনাক্তকরণে এর ব্যবহার খুবই কার্যকর।

  • মানুষের পরিশ্রম কমানো: ঝুঁকিপূর্ণ বা ক্লান্তিকর কাজ, যেমন মহাকাশ গবেষণা, খনি অনুসন্ধান বা দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় কাজ করার জন্য AI ব্যবহার করা হয়, যা মানুষের জীবনকে নিরাপদ রাখে।

  • উন্নত গ্রাহক পরিষেবা: চ্যাটবট এবং ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টের মাধ্যমে ২৪/৭ গ্রাহক সহায়তা প্রদান করা সম্ভব হয়, যা গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা উন্নত করে।

  • শিক্ষা ও গবেষণায় সহায়তা: AI শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যক্তিগতকৃত শিক্ষার পরিকল্পনা তৈরি করতে পারে এবং গবেষণার জন্য উন্নত ডেটা বিশ্লেষণ সরবরাহ করে।

  • নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন: স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তির উন্নয়নে AI গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

  • ভুল কম করা: AI সিস্টেম মানুষের মতো ক্লান্ত বা আবেগপ্রবণ হয় না, তাই তথ্য প্রক্রিয়াকরণে ভুল হওয়ার হার অনেক কম থাকে।


Photo Credit : agsandrew / Daily News BD

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অসুবিধা (Disadvantages of AI)

  • বেকারত্ব বৃদ্ধি: AI অনেক কাজ স্বয়ংক্রিয় করায় মানুষের প্রয়োজন কমে যেতে পারে, ফলে কিছু খাতে কর্মসংস্থানের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

  • নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কা: AI সিস্টেমগুলো অত্যন্ত স্বয়ংক্রিয় হওয়ায় কখনও কখনও মানুষের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কাজ করতে পারে, যা অপ্রত্যাশিত বা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।

  • নির্ভরতা বৃদ্ধি: AI ব্যবহারের অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা মানুষের সৃজনশীলতা এবং সমস্যা সমাধানের স্বাভাবিক ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

  • গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার ঝুঁকি: AI সিস্টেম বিপুল পরিমাণ ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে। এই তথ্য যদি হ্যাক হয় বা ভুলভাবে ব্যবহৃত হয়, তাহলে গোপনীয়তা লঙ্ঘনের মতো গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে।

  • উচ্চতর খরচ: AI সিস্টেম স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং আপগ্রেড করতে প্রচুর খরচ হয়, যা ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ব্যয়বহুল হতে পারে।

  • নৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ: AI ব্যবহারে কিছু নৈতিক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, যেমন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের ব্যবহার বা AI এর সিদ্ধান্ত গ্রহণে পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনা। যদি AI-কে ভুল বা পক্ষপাতদুষ্ট ডেটা দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তাহলে এটি ভুল বা বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

  • ভুল তথ্যের বিস্তার: জেনারেটিভ AI (যেমন চ্যাটবট) মাঝে মাঝে ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য তৈরি করতে পারে, যা সমাজে ভুল বোঝাবুঝি বা গুজব ছড়াতে পারে।


কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি, যা আমাদের জীবনকে অনেক সহজ এবং উন্নত করতে পারে। তবে এর সুবিধাগুলোকে কাজে লাগাতে এবং অসুবিধাগুলো এড়াতে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং নৈতিক ও দায়িত্বশীল ব্যবহারের দিকে জোর দিতে হবে।


এআই (AI) এর মাধ্যমে মানুষের চেহারা ব্যবহার করাটা বেশ বিপদজনক হতে পারে। এর অনেকগুলো গুরুতর ঝুঁকি আছে, যার মধ্যে কিছু নিচে উল্লেখ করা হলো:


১. গোপনীয়তার লঙ্ঘন (Privacy Violations)

  • ব্যাপক নজরদারি: এআই-ভিত্তিক ফেসিয়াল রিকগনিশন (facial recognition) প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকার বা কর্পোরেশনগুলো মানুষের গতিবিধি, আচরণ এবং অবস্থান ট্র্যাক করতে পারে। এতে ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।

  • সম্মতি ছাড়া ডেটা সংগ্রহ: অনেক সময় ব্যবহারকারীর অজান্তেই বা সম্মতি ছাড়া তাদের মুখের ডেটা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়, যা গোপনীয়তার মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।


২. ডেটা নিরাপত্তা ঝুঁকি (Data Security Risks)

  • তথ্য ফাঁস: মুখের ডেটা (বায়োমেট্রিক ডেটা) অত্যন্ত সংবেদনশীল। যদি এই ডেটা হ্যাক হয়ে যায়, তাহলে তা পরিচয় চুরি, ব্ল্যাকমেইলিং এবং সাইবারস্টকিংয়ের মতো গুরুতর অপরাধের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।

  • অপব্যবহার: একবার মুখের ডেটা অন্যের হাতে চলে গেলে তা বিভিন্ন অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার হতে পারে।


৩. ভুল শনাক্তকরণ এবং পক্ষপাত (Misidentification and Bias)

  • জাতিগত ও লিঙ্গ পক্ষপাত: গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক ফেসিয়াল রিকগনিশন অ্যালগরিদম নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠী, বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ এবং নারীদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে কম নির্ভুল। এর ফলে ভুল অভিযোগ বা বিচারিক ত্রুটির শিকার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

  • ভুল গ্রেপ্তার: ভুল শনাক্তকরণের কারণে নিরীহ মানুষ মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার হতে পারে, যা তাদের জীবনে দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।


৪. ডিপফেক (Deepfakes) এর ঝুঁকি

  • ভুল তথ্য ছড়ানো: ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের চেহারা ও কণ্ঠস্বর দিয়ে এমন ভিডিও বা অডিও তৈরি করা সম্ভব, যা বাস্তব না হলেও দেখতে বা শুনতে আসল মনে হয়। এর মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য, গুজব বা মানহানিকর বিষয় ছড়ানো হতে পারে, যা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করতে পারে।

  • প্রতারণা ও চাঁদাবাজি: ডিপফেক ব্যবহার করে সাইবার অপরাধীরা মানুষকে প্রতারিত করতে পারে, যেমন - উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ছদ্মবেশে আর্থিক লেনদেন করানো বা গোপন তথ্য হাতিয়ে নেওয়া।

  • সাইবারবুলিং এবং হয়রানি: কারো চেহারা ব্যবহার করে অশ্লীল বা আপত্তিকর কনটেন্ট তৈরি করে তাকে হয়রানি করা হতে পারে।


৫. মানসিক ও সামাজিক প্রভাব (Psychological and Social Impact)

  • আস্থার অভাব: প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা বাড়ার সাথে সাথে মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি হতে পারে, কারণ তারা জানে না কখন কোন ছবি বা ভিডিও আসল আর কোনটি নকল।

  • মানসিক চাপ: ডিপফেক বা ভুল শনাক্তকরণের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা তীব্র মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং হতাশার মধ্য দিয়ে যেতে পারে।


৬. নিয়ন্ত্রণের অভাব (Lack of Regulation)

  • বর্তমানে, এআই এবং ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত আইন ও নীতিমালা নেই, যার ফলে এর অপব্যবহার বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।

এই ঝুঁকিগুলো মোকাবিলা করার জন্য প্রযুক্তিগত সমাধান, কঠোর আইন প্রণয়ন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এআই ডেভেলপমেন্টে নৈতিকতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন