৩৫১২ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন, আরও ৯০০ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন

 


স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়নে আসছে বড় পরিবর্তন

  • ৩৫১২ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের নিয়োগ প্রদানসহ আরও অন্যান্য পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে
  • পদোন্নতি পাচ্ছেন ৭ হাজার চিকিৎসক, সুপার নিউমারারি পদে নিয়োগ হবে সাড়ে ৬ হাজার
  • ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহতরা


নিজস্ব প্রতিবেদক 

দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে স্থবির হয়ে পড়ে দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত। পরবর্তীতে অন্তর্র্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় জুলাই আন্দোলন চলাকালে শহীদ ও আহতদের ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে এ পর্যন্ত গুরুতর আহত ৭৮ জনকে উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আধুনিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সংস্কারের অংশ হিসেবে ৭ হাজার চিকিৎসককে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সুপার নিউমারারি পদে সাড়ে ৬ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে আগত রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিতকরণে কয়েক ধাপে ৩ হাজার ৫১২ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া আরও ৯০০ সিনিয়র স্টাফ নার্সের নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন, এবং ৫ হাজার সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ৪ হাজার মিডওয়াইফের জন্য পদ সৃষ্টি সংক্রান্ত প্রস্তাব অর্থমন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়নে বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে অন্তর্বর্তী সরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম বলেছেন, জুলাই আন্দোলনে আহত রোগীদের উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণ ও পুনর্বসনে সহায়তা করবে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। আহত জুলাই যোদ্ধাদের সরকারি হাসপাতালে আজীবন বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির জন্য স্বাস্থ্যকার্ড প্রদান করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় শরীক জোট সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ তার অধীনস্থ বিভিন্ন বিভাগ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়। কাগজে-কলমে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে ঘটেছে ব্যাপক দুর্নীতি আর অনিয়ম। বিভিন্ন হাসপাতালের সংস্কার থেকে শুরু করে চিকিৎসা সেবার জন্য এমনকি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মূল্যবান যন্ত্রাংশ কেনাকাটা, টেন্ডারবাজিতে দলীয় লোকদেরই কাজ পাইয়ে দিতে কাজ করতো মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এছাড়া উচ্চতর প্রশিক্ষণের নামে দফায় দফায় চিকিৎসক দল ও নার্সদের বিদেশভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের ব্যাপক অর্থের অপচয় ঘটে। বিগত সময়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্যে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার তৃণমূলেও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা ছিল কেবল লোক দেখানো প্রতিশ্রুতি। এর ফলে রাতারাতি অঢেল সম্পত্তির মালিক বনে যান আওয়ামী ঘরোনার চিকিৎসক-নার্স ও স্বাচিপ নেতৃবৃন্দসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বাস্তবে রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে সরকারি হাসপাতালে থেকেছেন অবহেলিত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তৎকালীন সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে এবং আওয়ামী লগি ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সশস্ত্র হামলায় হাজার হাজার শিক্ষার্থী শহীদ ও আহত হন। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর জনরোষের ভয়ে দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে চলে যান সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ দলের তৃণমূলের লাখ লাখ নেতাকর্মী ও শেখ হাসিনার আজ্ঞাবহ সরকারি আমলা-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা। এরপর ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। দায়িত্ব গ্রহণের পরই প্রথম অগ্রাধিকার দেওয়া হয় জুলাই আন্দোলনে হতাহতের জুলাই যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা। তারই ধারাবাহিকতায় স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়নে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার।   
দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর উপলক্ষে চলতি মাসের ৭ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি তুলে ধরেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী প্রমুখ।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্র্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়গুলোর একটি হচ্ছে- বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের সুষ্ঠু চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। গত বছরের ১৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা ও শহিদ পরিবারকে সহায়তা প্রদানের উদ্দেশে একটি নীতিমালা প্রণয়ন এবং শহিদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিচিতিসহ একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস কর্তৃক সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে জুলাই আন্দোলনে আহত ও শহীদের তালিকা ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির মাধ্যমে তালিকা চূড়ান্তভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়। আহত সব রোগীদের দেশের সব সরকারি হাসপাতালে সরকারের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া, গুরুতর আহতদের উন্নততর চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড এর সুপারিশের প্রেক্ষিতে বিদেশ পাঠানো হয়।
নুরজাহান বেগম বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের নিয়োগপ্রাপ্তরা হাসপাতালে রোগীদের তথ্যাবলি ও রেজিস্টার ঠিকমতো সংরক্ষণ করেননি বিধায় আহতদের বিষয়ে সঠিক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহপূর্বক চিকিৎসা সেবা প্রদান কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এছাড়া ওই সময়ে অনেক আহত ভয়বশত তাদের সঠিক তথ্য, ফোন নম্বর লিপিবদ্ধ করেননি। এ রকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কিছু ক্ষেত্রে গণমাধ্যমে রোগীদের তথ্য পাওয়ার পর মন্ত্রণালয় উদ্যোগ গ্রহণপূর্বক রোগীদের ঢাকায় এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এখন পর্যন্ত আহত ১৩ হাজার ৮১১ জনের নাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকায় যুক্ত হয়েছে। গেজেটে প্রকাশিত ভেরিফায়েড আহতের সংখ্যা ১২ হাজার ৪২ জন। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সংগৃহীত জুলাই আন্দোলনে আহত ও নিহতদের তালিকা এমআইএস’র মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা জানান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে মোট ৪০ জন জুলাই আহতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়। যাদের মধ্যে থাইল্যান্ডে ২৬ জন, সিঙ্গাপুরে ১৩ জন এবং রাশিয়ায় ১ জন রোগী চিকিৎসা নেন। এসব রোগী মূলত চোখ, অঙ্গহানি, ব্রেইন এবং স্পাইনালকর্ডে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। গত ২৭ জুলাই পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কর্তৃক মেডিক্যাল বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার লক্ষ্যে ১০৪ জন রোগীর তালিকা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ৩৮ জন রোগীকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছে। বর্তমানে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সহযোগিতায় মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশের আলোকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আরও আহত রোগীকে বিদেশের হাসপাতালে প্রেরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। গত ২৭ জুলাই পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে উন্নত চিকিৎসার জন্য সর্বমোট ৭৮ জনকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে।
নুরজাহান বেগম বলেন, দেশের চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়ার পরও বিশ্বের ৭ দেশ থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে চিকিৎসা নিশ্চিত করেছি। সিঙ্গাপুর, নেপাল, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, যুক্তরাজ্য ও থাইল্যান্ড হতে এ পর্যন্ত ২৬ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাংলাদেশে এসে আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছেন এবং বেশ কয়েকজন আহতের সার্জারি সম্পন্ন করেছেন। 
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্য থেকে আগত বিশেষজ্ঞ টিম নিটোর-এ ভর্তি ১৮ জন রোগীর অপারেশন সম্পন্ন করেছেন। জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে নেপাল হতে আগত বিশেষজ্ঞ টিম ৪ জনের এবং ইউকে হতে আগত টিম ২৪ জন রোগীর অপারেশন সম্পন্ন করেছেন। সেবা ফাউন্ডেশন, ইউএসএ এবং নেপাল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ২ জন রোগীর চোখে কর্নিয়া ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য নেপাল হতে অতি সংবেদনশীল কর্ণিয়াল টিস্যু বাংলাদেশে আনা হয় এবং আন্দোলনে আহত ২ জনের চোখের কর্নিয়া ট্রান্সপ্লান্ট, সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন হয়। এছাড়া, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটকে সেবা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ৪০টি কর্নিয়া সরবরাহের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক, নার্স এবং সংশ্লিষ্ট সবার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করা হয়েছে। বিদেশ হতে আগত চিকিৎসকগণও এযাবৎ দেশে প্রদত্ত চিকিৎসা প্রটোকল এবং সেবা কার্যক্রম যথোপযুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা জানান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ আহত রোগীদের উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে সহায়তা করবে। আহত জুলাই যোদ্ধাদের আজীবন সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তির জন্য স্বাস্থ্য কার্ড প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গেজেটভুক্ত ১২ হাজার ৪২ জন জুলাই যোদ্ধার মাঝে ৭ হাজার ৩৬৩ জনকে স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। রোগীদের খাবারের গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে পথ্য খাতে জনপ্রতি বরাদ্দ ১৭৫ টাকা হতে ২৫০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া, আহতদের বিনামূল্যে হাসপাতালের বেড সেবা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পক্ষাঘাতগ্রস্ত জুলাই আহতদের উন্নত মানের চিকিৎসা দিতে সরকার চীনের সহায়তায় রোবটিক ফিজিওথেরাপি সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক রোবটিক ফিজিওথেরাপি সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ জন রোগীকে উচ্চমানের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে। রোবোটিক ফিজিওথেরাপি সেন্টারটিতে থাকছে ৬২টি উন্নত রোবোটিক থেরাপি ইউনিট, যার মধ্যে ২২টি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে চালিত হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপির জগতে এক অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ঘটবে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতরা ছাড়াও অন্যান্য সাধারণ রোগীদের জন্যও এ সেন্টার হতে সেবা গ্রহণের দ্বার উন্মোচিত হবে। এছাড়া দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান নিশ্চিতকরণে মনিটরিং সেল গঠনসহ সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এর ব্যতয় ঘটলে বিধি মোতাবেক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা।
নুরজাহান বেগম আরও বলেন, স্বাস্থ্যখাতে চিকিৎসকসহ জনবল সংকট সমাধানে আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করেছি। ৪৮তম বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে ৩০০০ জন চিকিৎসক নিয়োগের জন্য কার্যক্রম চলছে। পিএসসিতে সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৪৫তম, ৪৬তম ও ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে আরও ৩ হাজার ৫০০ জনের অধিক চিকিৎসক নিয়োগ কার্যক্রমও চলমান। এই সব উদ্যোগের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা যাবে এবং চিকিৎসক সংকট অনেকাংশে লাঘব হবে। শুধু চিকিৎসক নয় ইতোমধ্যে পিএসসি’র মাধ্যমে ৩ হাজার ৫১২ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং এখন পদায়নের কার্যক্রম চলছে। এছাড়া, আরও ৯০০ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন, এবং ৫ হাজার সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ৪ হাজার মিডওয়াইফের জন্য পদ সৃষ্টি সংক্রান্ত প্রস্তাব অর্থমন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। 
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা জানান, চিকিৎসকদের পেশাগত মর্যাদা ও কর্মপরিবেশ উন্নয়নের অংশ হিসেবে অন্তর্র্বতী সরকার প্রায় ৭,০০০ চিকিৎসককে পদোন্নতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো সুপার নিউমারারি পদ সৃষ্টি করে চিকিৎসকদের ব্যাপক পরিসরে পদোন্নতির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিপুল সংখ্যক চিকিৎসককে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, পরিচালক, জুনিয়র কনসালটেন্ট ইত্যাদি পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) এর মাধ্যমে ৮৬টি বিষয়ে প্রায় ৮০০ চিকিৎসককে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রদানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শূন্য পদে পদোন্নতির কার্যক্রম শেষে সুপার নিউমারারি পদে আরও প্রায় ৬০০০ চিকিৎসককে বিভিন্ন পদে পদোন্নতি প্রদান করা হবে।
তিনি জানান, আমরা দেশের স্বাস্থ্যখাতে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আগামী দিনগুলোতে এর সুফল পাওয়া যাবে বলে আশা করি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন