ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
মানবসভ্যতার ইতিহাসে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি এক অভাবনীয় অর্জন। এক সময় যে রোগগুলোকে অচিকিৎসাযোগ্য বা মরণব্যাধি মনে করা হতো, আজ তা আধুনিক চিকিৎসা এবং বিশেষায়িত চিকিৎসা ইউনিটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণযোগ্য হয়েছে। বিশেষ করে সংকটাপন্ন রোগীর জীবন রক্ষায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কক্ষ (আইসিইউ), হৃদরোগ বিশেষায়িত কক্ষ (সিসিইউ), নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কক্ষ (এনআইসিইউ), শিশুর নিবিড় পরিচর্যা কক্ষ (পিআইসিইউ), তীব্ররোগ বিশেষায়িত কক্ষ (এমআইসিইউ), শল্যচিকিৎসা নিবিড় কক্ষ (এসআইসিইউ), নবজাতক হৃদরোগ বিশেষায়িত কক্ষ (বিআইসিইউ) ইত্যাদি ইউনিট চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে।আধুনিক হাসপাতালগুলোতে শুধু রোগীর চিকিৎসা নয়, বরং তার জীবন রক্ষার্থে ২৪ ঘণ্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণ, উন্নত যন্ত্রপাতি, এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বিত সেবা প্রদান করা হয়। প্রতিটি ইউনিটের কার্যকারিতা রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, আইসিইউ গুরুতর শারীরিক অবস্থায় থাকা রোগীর জন্য, সিসিইউ হৃদরোগের রোগীর জন্য, এবং এনআইসিইউ নবজাতক শৈশবকালীন জটিলতায় আক্রান্ত শিশুর জন্য বিশেষভাবে পরিচালিত হয়।
চিকিৎসা খরচও প্রতিটি ইউনিট অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। আইসিইউ এবং সিসিইউ তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল, কারণ এখানে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং উচ্চমানের পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। অন্যদিকে, পিআইসিইউ বা এনআইসিইউ শিশু বা নবজাতকের যত্নে নিবেদিত হলেও, ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা খরচও উল্লেখযোগ্য।
১. আইসিইউ
আইসিইউ হলো হাসপাতালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। এখানে রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস কৃত্রিমভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, হৃদযন্ত্র সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হয়, এবং অঙ্গ বিকলের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সম্ভব।
> যেসব রোগীর জন্য প্রয়োজন:
* বড় দুর্ঘটনা ও ট্রমা আক্রান্ত রোগী * স্ট্রোক বা ব্রেন হেমারেজ রোগী * মারাত্মক শ্বাসকষ্ট (ARDS, COPD) * অঙ্গ বিকল রোগী
> খরচ:- * বাংলাদেশ: দৈনিক ৮,০০০–৩০,০০০ টাকা * যুক্তরাষ্ট্র: ৩,০০০–১০,০০০ ডলার
* ইউরোপ : ২,০০০–৭,০০০ ইউরো * ভারত: ১৫,০০০–৫০,০০০ রুপি। আইসিইউ রোগীর জীবন বাঁচানোর শেষ আশ্রয়। বাংলাদেশের বেসরকারি হাসপাতালে খরচ তুলনামূলক বেশি, যা সাধারণ মানুষের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
২. সিসিইউ
হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউর এবং গুরুতর কার্ডিয়াক সমস্যার রোগীদের জন্য সিসিইউ অপরিহার্য।
> সুবিধা:- * সার্বক্ষণিক ইসিজি মনিটরিং
* ডিফিব্রিলেটর সুবিধা * কার্ডিয়াক ক্যাথ ল্যাব সংযোগ * অভিজ্ঞ কার্ডিওলজিস্ট উপস্থিতি
> খরচ:- * বাংলাদেশ: ১০,০০০–২৫,০০০ টাকা দৈনিক; সম্পূর্ণ চিকিৎসা ২–৫ লাখ টাকা পর্যন্ত
* যুক্তরাষ্ট্র: দৈনিক ৫,০০০–১৫,০০০ ডলার * ভারত: ২০,০০০–৬০,০০০ রুপি
৩. এসডিইউ
আইসিইউ বা সিসিইউ থেকে কিছুটা সুস্থ হলেও এখনো সাধারণ ওয়ার্ডে স্থিতিশীল না হওয়া রোগীদের জন্য এসডিইউ গুরুত্বপূর্ণ। এটি রোগীর পর্যবেক্ষণ বজায় রেখে আইসিইউ-এর চাপ কমায়।
> খরচ: - * বাংলাদেশ: ৫,০০০–১২,০০০ টাকা
* যুক্তরাষ্ট্র: ২,০০০–৫,০০০ ডলার
৪. এনআইসিইউ
প্রিম্যাচিউর, শ্বাসকষ্ট, ইনফেকশন বা জন্মগত ত্রুটি নিয়ে নবজাতক রোগীদের জন্য এনআইসিইউ অপরিহার্য।
> সুবিধা: - * ইনকিউবেটর ও অক্সিজেন সাপোর্ট
শিশু নবজাতক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকএর উপস্থিতি * মা-বাবার জন্য বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা * সংক্রমণ প্রতিরোধের কঠোর ব্যবস্থা
> খরচ: - * বাংলাদেশ: ৫,০০০–২০,০০০ টাকা দৈনিক; মোট খরচ ১–৩ লাখ টাকা। * যুক্তরাষ্ট্র: ৩,০০০–১০,০০০ ডলার দৈনিক; মোট ২–৫ লাখ ডলার। * ভারত: ২০,০০০–৫০,০০০ রুপি
৫. পিআইসিইউ
১ মাস থেকে ১২ বছরের শিশুদের জন্য পিআইসিইউ অপরিহার্য।
> যেসব রোগীর জন্য প্রয়োজন:- * মারাত্মক নিউমোনিয়া * ডেঙ্গু জটিলতা * মেনিনজাইটিস
* শিশুদের হার্ট সমস্যা
> খরচ: * বাংলাদেশ দৈনিক : ৭,০০০–১৮,০০০ টাকা। * যুক্তরাষ্ট্র: ৪,০০০–৮,০০০ ডলার। * ভারত: ১৫,০০০–৪০,০০০ রুপি
৬. এমআইসিইউ
প্রাপ্তবয়স্কদের মেডিকেল কারণে গুরুতর অসুস্থ হলে এমআইসিইউ তে ভর্তি করা হয়। উদাহরণস্বরূপ: সেপসিস, কিডনি বা লিভার ফেলিউর, মারাত্মক শ্বাসকষ্ট।
> খরচ: - * বাংলাদেশ দৈনিক : ১০,০০০–২০,০০০ টাকা * যুক্তরাষ্ট্র: ৩,০০০–৭,০০০ ডলার
৭. এসআইসিইউ
বড় ধরনের অস্ত্রোপচারের পর রোগীকে এসআইসিইউ তে রাখা হয়। যেমন: হার্ট বাইপাস, ব্রেন সার্জারি, কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট।
> খরচ: - বাংলাদেশ: ১২,০০০–২৫,০০০ টাকা
* যুক্তরাষ্ট্র: ৫,০০০–১২,০০০ ডলার
৮. বার্ন ইউনিট বা বিআইসিইউ
অগ্নিদগ্ধ রোগীর সংক্রমণ প্রতিরোধে বার্ন ইউনিট বা বিআইসিইউ
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
> খরচ: - * বাংলাদেশ: ১–৫ লাখ টাকা
* যুক্তরাষ্ট্র: ২–১০ লাখ ডলার
৯. ট্রমা কেয়ার ইউনিট
দুর্ঘটনা ও হঠাৎ আঘাতপ্রাপ্ত রোগীর জীবন বাঁচাতে ট্রমা কেয়ার ইউনিট অপরিহার্য।
> খরচ: -* বাংলাদেশ: ৫০,০০০–৩ লাখ টাকা
* যুক্তরাষ্ট্র: ৩০,০০০–৫০,০০০ ডলার
১০. জরুরি বিভাগ
রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা ও প্রয়োজন অনুযায়ী ICU/CCU/NICU-তে রেফার করা হয়।
> খরচ:- * বাংলাদেশ: ২,০০০–১০,০০০ টাকা
* যুক্তরাষ্ট্র: ১,০০০–৫,০০০ ডলার
> আধুনিক প্রযুক্তির ভূমিকা
* AI মনিটরিং: - রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃদস্পন্দন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জীবনীশক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে। এটি চিকিৎসককে তাত্ক্ষণিক সতর্কতা দেয় এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে।
* টেলি-ICU: - দূরবর্তী অবস্থান থেকেও রোগীর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ সম্ভব। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যেকোনো হাসপাতালে রোগীর অবস্থা মনিটর করতে পারেন, যা রোগীর সঠিক ও সময়মতো চিকিৎসা নিশ্চিত করে।
* রোবটিক সার্জারি:- জটিল অস্ত্রোপচারে সাফল্যের হার বৃদ্ধি করে। ছোট ক্ষত, কম রক্তক্ষরণ এবং দ্রুত পুনরুদ্ধার নিশ্চিত হয়, যা রোগীর পুনর্বাসন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
* সামগ্রিক প্রভাব:- আধুনিক প্রযুক্তির সংমিশ্রণ চিকিৎসাকে আরও নিরাপদ, নির্ভুল ও দক্ষ করে তুলেছে। রোগীর জীবন রক্ষা করা এবং চিকিৎসা প্রক্রিয়াকে উন্নত করা এখন সম্ভব।
> বাংলাদেশ বনাম বিশ্বের চিকিৎসা খরচ ও স্বাস্থ্যসেবা
* উন্নত দেশে স্বাস্থ্যখরচ বেশি হলেও অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্যবীমার আওতায় থাকে।
* স্বাস্থ্যবীমা থাকায় রোগীর ব্যক্তিগত খরচ অনেকাংশে কমে যায়।
* উন্নত দেশে আইসিইউ, সিসিইউ, এবং অন্যান্য বিশেষায়িত ইউনিটে চিকিৎসা গ্রহণ সহজ ও সুরক্ষিত।
* বাংলাদেশে সাধারণভাবে স্বাস্থ্যবীমা নেই।
* রোগীর পরিবারকে হাসপাতালের সমস্ত চিকিৎসা খরচ নিজেই বহন করতে হয়।
* সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার খরচ তুলনামূলকভাবে কম।
* সরকারি হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা সীমিত এবং দীর্ঘ রোগীর জন্য অপেক্ষা দীর্ঘ হতে পারে।
* আইসিইউ, সিসিইউ, নিকিউ ইত্যাদিতে সরকারি শয্যার ঘাটতি প্রকট।
* বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ/সিসিইউ খরচ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
* বিশেষায়িত চিকিৎসা ও জীবনরক্ষা কার্যক্রমে উচ্চমূল্য হওয়ায় দরিদ্র রোগীর প্রবেশ সীমিত।
* উন্নত দেশে সরকার ও বীমা প্রতিষ্ঠান রোগীদের সহায়তায় বড় ভূমিকা রাখে।
* বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন হলেও, খরচ ও সুযোগের বৈষম্য এখনো চোখে পড়ে।
* আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা সুবিধা গ্রামীণ ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সীমিত।
* স্বাস্থ্যনীতি ও বীমার সম্প্রসারণ রোগীর আর্থিক বোঝা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ।
> চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
* সরকারি আইসিইউ /সিসিইউ বেড সংখ্যা বৃদ্ধিকরা : সরকারি হাসপাতালে সংকটাপন্ন রোগীর জন্য বেড সংখ্যা সীমিত। বেড বৃদ্ধির মাধ্যমে জরুরি রোগী সময়মতো চিকিৎসা পাবে।
* জাতীয় স্বাস্থ্যবীমা চালু করা: স্বাস্থ্যবীমা থাকলে সাধারণ মানুষ চিকিৎসার ব্যয়ভার নিয়ে চিন্তিত হবে না এবং চিকিৎসা সহজলভ্য হবে।
* গ্রামীণ অঞ্চলে বিশেষায়িত ইউনিট স্থাপন করা: দূরবর্তী ও গ্রামীণ অঞ্চলের রোগীরা সহজে বিশেষায়িত চিকিৎসা সুবিধা পাবে।
* দক্ষ চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা বৃদ্ধি করা: পর্যাপ্ত ও প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্স থাকলে রোগীর সেবা মানসম্মত ও নিরাপদ হবে।
* নতুন প্রযুক্তি ও দূর-চিকিৎসা ব্যবস্থার সম্প্রসারণ করা : রোবোটিক সার্জারি, স্বয়ংক্রিয় মনিটরিং এবং দূর-চিকিৎসার মাধ্যমে চিকিৎসা দ্রুত, কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য হবে।
* সর্বাত্মক পরিকল্পনা ও সমন্বয়: সরকার, স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান এবং কমিউনিটির সমন্বিত প্রচেষ্টা রোগীর চিকিৎসা মান উন্নত করবে।
* সচেতনতা বৃদ্ধি করা : রোগী ও পরিবারকে স্বাস্থ্যবীমা এবং জরুরি চিকিৎসা সম্পর্কে জানানো প্রয়োজন।
> সংকটাপন্ন রোগে হোমিওপ্যাথির ভূমিকা
হোমিওপ্যাথি হলো প্রাকৃতিক ও নিরাপদ চিকিৎসা পদ্ধতি, যা শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা উদ্দীপ্ত করে এবং রোগীর পুনরুদ্ধারকে দ্রুততর করে। নিবিড় পরিচর্যা কক্ষ (গুরুতর রোগী পর্যবেক্ষণ কক্ষ), হৃদরোগ বিশেষায়িত কক্ষ (কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিট), নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কক্ষ, শিশুর নিবিড় পরিচর্যা কক্ষ, তীব্ররোগ বিশেষায়িত কক্ষ, শল্যচিকিৎসা নিবিড় কক্ষ ও বার্ন ইউনিট রোগীদের সহায়ক চিকিৎসার সঙ্গে হোমিওপ্যাথি ব্যবহার করা যায়।
১. বড় দুর্ঘটনা ও ট্রমা (আইসিইউ /ট্রমা কেয়ার ইউনিট): আর্নিকা মাংসপেশীর ব্যথা ও ফোলা কমায় এবং রক্তক্ষরণজনিত শক হ্রাস করে।
২ . স্ট্রোক বা মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ আইসিইউ /মস্তিষ্কীয় রক্তক্ষরণ): নেট্রামমিউর রোগীর পুনরুদ্ধার দ্রুত করে।
৩. হৃদরোগ (কার্ডিয়াক সমস্যা/হৃদরোগ বিশেষায়িত কক্ষ):ক্র্যাটেগাস ও ডিজিটালিস হৃদপেশীর কার্যকারিতা উন্নত করে এবং মানসিক চাপ কমায়। কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিটে পর্যবেক্ষণসহ রোগীর স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে।
৪. শ্বাসকষ্ট ও শ্বাসনালি সমস্যা (আইসিইউ /তীব্র শ্বাসকষ্ট কক্ষ): ফসফরাস ও আর্সেনিকাম অ্যালবাম শ্বাসকষ্ট ও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
৫. সেপসিস বা রক্ত বিষক্রিয়া (তীব্ররোগ বিশেষায়িত কক্ষ): আর্সেনিকাম অ্যালবাম রোগীর দুর্বলতা কমায় এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৬. নবজাতকের শ্বাসকষ্ট ও জন্মগত জটিলতা (নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কক্ষ): ক্যামোমিলা ও পালসেটিলা নবজাতকের স্বস্তি ও শক্তি বৃদ্ধি করে।
৭. শিশুর মারাত্মক সংক্রমণ (শিশুর নিবিড় পরিচর্যা কক্ষ – নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস, ডেঙ্গু): ফসফরাস ও পালসেটিলা শিশু রোগীর শক্তি বৃদ্ধি করে।
৮. অগ্নিদগ্ধ রোগী (বার্ন ইউনিট): ক্যানথারিস ও উর্টিকা সংক্রমণ প্রতিরোধে এবং আরাম নিশ্চিত করে।
৯. অঙ্গ বিকল বা শল্যচিকিৎসা পরবর্তী জটিলতা (শল্যচিকিৎসা নিবিড় কক্ষ):
আর্নিকা ও হ্যাপালিস ক্ষত নিরাময় এবং ব্যথা কমায়।
১০ মানসিক চাপ ও শক (আইসিইউ /কার্ডিয়াক কেয়ার/শিশুর নিবিড় পরিচর্যা কক্ষ):
পাসিফ্লোরা মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।
> হোমিওপ্যাথির সুবিধা
অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চিকিৎসকের পরামর্শে থাকলে
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব কম। * শিশু ও নবজাতকের জন্য নিরাপদ। * শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় করে। * নিবিড় পরিচর্যা কক্ষের অন্যান্য চিকিৎসার সঙ্গে সমন্বয়যোগ্য।
* দীর্ঘমেয়াদি পুনরুদ্ধার ও শক্তি বৃদ্ধি করে।
তাই সংকটাপন্ন রোগীর জীবন রক্ষায় হোমিওপ্যাথি আধুনিক চিকিৎসার সঙ্গে সমন্বয় করলে রোগীর শারীরিক ও মানসিক পুনরুদ্ধার দ্রুত এবং কার্যকর হয়। এটি রোগীর সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে নিরাপত্তা ও সুস্থতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।
পরিশেষে বলতে চাই, সংকটাপন্ন রোগীর জীবন রক্ষায় বিশেষায়িত ইউনিটগুলো আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মূল ভিত্তি। প্রতিটি ইউনিটের নিজস্ব বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে: আইসিইউ তীব্র রোগীর জন্য সর্বোচ্চ পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা প্রদান করে, সিসিইউ হৃদরোগীর পর্যবেক্ষণ করে, এনআইসিইউ নবজাতকের জীবন রক্ষা করে, এবং পিআইসিইউ শিশু রোগীর জন্য বিশেষায়িত সেবা নিশ্চিত করে। এমআইসিইউ, এসআইসিইউ, ও বিআইসিইউ আরও জটিল ও বিশেষ ধরনের রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করে। এআই মনিটরিং টেলিমেডিসিন রোবোটিক সার্জারি-এর মতো উন্নত প্রযুক্তি জীবন রক্ষাকে আরও কার্যকর ও নির্ভুল করে। দক্ষ চিকিৎসক, নার্স এবং সহানুভূতিশীল স্বাস্থ্যসেবা কেবল জীবন বাঁচায় না, বরং চিকিৎসা প্রক্রিয়াকে মানবিক ও টেকসই করে।বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এই ইউনিটগুলোর সুবিধা সীমিত, এবং আইসিইউ/সিসিইউ খরচ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। তাই সুলভ স্বাস্থ্যসেবা, আইসিইউ/সিসিইউ প্রসার এবং জাতীয় স্বাস্থ্যবীমা বাস্তবায়ন ভবিষ্যতের প্রধান চ্যালেঞ্জ। মানবজীবন অমূল্য, তাই উন্নত চিকিৎসা প্রতিটি মানুষের নাগালের মধ্যে আনা এখন সময়ের দাবি। স্বাস্থ্যসেবাকে সমৃদ্ধ, সমান ও মানবিক করে তোলা আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।
তাই ভবিষ্যতে, এসব বিশেষায়িত ইউনিট আরও উন্নত প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার এবং রোগীর নিরাপত্তা বৃদ্ধির দিকে এগোবে। তবে উচ্চ খরচ, পর্যাপ্ত জনবল ও প্রশিক্ষণের অভাব, এবং স্বাস্থ্যসেবায় সমতা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকবে।
লেখক,কলাম ও গবেষক
প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
ইমেইল, drmazed96@gmail.com