৮০ লাখ টাকা নিয়েও চোরাই মামলায় ফাঁসিয়েছিলেন ব্যবসায়ীকে!

প্রতীকী ছবি

ডিবি পুলিশের এডিসি সাইফুর রহমান আজাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা, তদন্ত করছেন সিআইডি পুলিশ

মোঃ লুৎফর রহমান (খাজা শাহ্) : ডিবি কার্যালয়ে আটকে রেখে কোটি টাকা আদায়ের পরেও মিথ্যা মামলায় হয়রানির অভিযোগে ডিএমপি লালবাগ জোনের সাবেক এডিসিসহ তার টিমের আরও ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন পুরান ঢাকার কাপড় ব্যবসায়ীআরেফিন খান ওরফে সামসুল আরেফিন। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে (সিআর মামলা নং-১৭৯৬/২৫) দায়ের করা মামলাটি সিআইডিকে তদন্ত করে আগামী ১৮ জানুয়ারি প্রতিবেদন পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ মামলায় অভিযুক্ত আসামিরা হলেন—ডিএমপি ডিবির লালবাগ জোনের সাবেক এডিসি মো. সাইফুর রহমান আজাদ, ডিবির কোতোয়ালী জোনাল টিমের উপ-পুলিশ পরিদর্শক পলাশ হোসেন, পুলিশ পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান, আবদুল মাবুদ,এএসআই বাবুল মিয়া, এএসআই জহুরুল ইসলাম, এএসআই আজিজুল ইসলাম, এএসআই ফরিদ উদ্দিন, এএসআই আকতারুল ইসলাম, এএসআই গৌতম কুমার পাল এবং কনস্টেবল রাশেদুল হাসানসহ অজ্ঞাত কয়েকজন।

তবে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ট্যুরিস্ট পুলিশে কর্মরত এডিসি মো. সাইফুর রহমান আজাদ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন। মামলার সূত্র মতে, বাদী এবং ভুক্তভোগী সামসুল আরেফিন ঢাকার কোতোয়ালী থানাধীন ইসলামপুর সেতারা মার্কেটের আফরোজা টেক্সটাইলের মালিক। গত ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ডিবির কোতোয়ালী জোনের উপ-পুলিশ পরিদর্শক পলাশ হোসেন একজন সোর্সসহ সামসুল ইসলামের প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তাকে অবৈধ কাপড় ব্যবসায়ী হিসেবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ আছে বলে প্রথমে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ২০২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ডিবির পলাশসহ সাবেক এডিসি সাইফুর রহমান আজাদ বাদীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বলেন, পলাশের মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকা দিতে বলেছিলাম, কথা না শোনার কারণ এখন ১ কোটি টাকা দিতে হবে।

এ সময় এডিসি সাইফুর রহমান আজাদের নির্দেশে বাদীকে তার প্রতিষ্ঠান থেকে জোর করে তুলে নেওয়া হয়। একই সঙ্গে তুলে নিয়ে যায় মামলার সাক্ষী মনির হোসেনকেও। তাদেরকে সোজা নিয়ে যাওয়া হয় মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে। সেদিন রাতে আটকৃতদেরস্বজনরা ডিবি কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। তখন ডিবি অফিসের উল্টো পাশে ডেকে নিয়ে বাদীর ভাই শাহাদাৎকে হুমকি দিয়ে বলা হয়, ১ কোটি টাকা না দিলে তাদেরকে গুম, জঙ্গি-মাদক কিংবা অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে। পরদিন ৬ সেপ্টেম্বর ২০ তারিখে শাহাদাৎ ও অপর ভাই আমজাদ এডিসি সাইফুর রহমানকে৩০ লাখ টাকা দেন। কিন্তু তাতেও আটকৃতদের ছেড়ে না দিয়ে ডিবি কার্যালয়ে তাদের নির্যাতন করা হয়।

পরদিন আমজাদ হোসেনকে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে ওই দিনের মধ্যেই আরও ৭০ লাখ টাকা পরিশোধ করে জিম্মিদের নিয়ে যেতেবলেন। সেদিন সাইফুর রহমান আজাদকে আরও ২৫ লাখ এবং পরদিন ৮ সেপ্টেম্বর আরও ২৫ লাখ টাকা দেন ভুক্তভোগীর ভাই। তিন দিনে মোট ৮০ লাখ টাকা নেওয়ার পরেও তাদের ছেড়ে না দিয়ে উল্টো আটকৃতদের স্বজনদের ডিবি এরিয়া থেকে চলেযেতে বলা হয়। অন্যথায় তাদেরও গ্রেফতারের হুমকি দেওয়া হয়।

বিষয়টি প্রকাশ পেতে পারে এ আশঙ্কা থেকে তুলে নেওয়ার ৫ দিন পরে ৮০ লাখ টাকার চোরাই কাপড় উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় একটি সাজানো মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। এ মামলার বাদী হন ডিবির কোতোয়ালী জোনাল টিমের তৎকালীন উপ-পুলিশ পরিদর্শক পলাশ হোসেন। এসব ঘটনায় কোনো ধরনের সংবাদ সম্মেলন কিংবা কারো কাছে প্রকাশ করা কিংবা আইনের আশ্রয় নিলে সকলকে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেন এডিসি সাইফুর রহমান আজাদ ও তার সহযোগীরা।

এ মামলায় আবুল কাশেমকে গ্রেফতার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়। সেখানে আবুল কাশেম উল্লেখ করেছেন, সামসুল আরেফিন তার প্রতিষ্ঠানে কখনোই চোরাই কাপড় রাখেন নাই। কিন্তু তারপরেও মামলাটি চলমান থাকে। ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে জীবনের ভয়ে বাদী পক্ষ কোনো আইনি সহায়তা নেওয়ার সাহস পাননি। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর ভুক্তভোগী ৮০ লাখ টাকা উদ্ধারের জন্য ২০২৪ সালের ৫ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে লিখিত আবেদন করেন। আবেদনটি ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন অ্যান্ড সুপ্রিম কোর্ট) তদন্ত করছেন।

কিন্তু তিনি বাদীকে কোনো রূপ সহযোগিতা না করায় ভুক্তভোগী অবশেষে আদালতের আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। গত ১৭ নভেম্বর পেনাল কোড ১৮৬০ এর ১৪৯/৩৬৫/৪৪৮/৩৪২/৩৮৫/৩৮৬/৩৪/৫০৬ ধারায় অভিযুক্ত সাইফুর রহমান আজাদ গংয়ের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তের জন্য ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুর রহমান সিআইডির এসএসপিকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন