সৌরভ মাহমুদ হারুন, বুড়িচং (কুমিল্লা) :
কুমিল্লার বুড়িচংয়ে সেফটি ট্যাংক থেকে প্রবাসীর স্ত্রীর ( জাল) মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে মাত্র দুই লাখ টাকার চুক্তিতে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বুধবার ২ জুলাই দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুল হক। তিনি জানান, নিহত গৃহবধূ ফেরদৌসী বেগমকে জমি সংক্রান্ত বিরোধের কারণে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ঝা নুরজাহান বেগমসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন: নুরজাহান বেগম (৫০), জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী ও নৌবাহিনীর সদস্য ইমতিয়াজের মা, আনোয়ার হোসেন (৩০), মো. সোলাইমান ওরফে তনু মিয়ার ছেলে রুবেল আহমেদ মিন্টু (৩১), মমতাজ উদ্দিন মন্তাজের ছেলে মো. মাইনুদ্দিন জিল্লু (২৭), মৃত খোরশেদ আলমের ছেলে।
পুলিশ জানায়, এদের মধ্যে আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে মাদকসহ ৮টি, রুবেল আহমেদের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ ট্রান্সফরমার চুরি ও মাদকসহ ১৪টি এবং মাইনুদ্দিন জিল্লুর বিরুদ্ধে ১টি মামলা রয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে পারিবারিক বিরোধ
ওসি জানান, বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ গ্রামের সৌদি প্রবাসী শামসুল হক আলমের স্ত্রী ফেরদৌসী বেগমের সঙ্গে তার ঝা নুরজাহান বেগমের দীর্ঘদিন ধরে বাড়ির পাশের জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় নুরজাহান বেগম মাদকসেবী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে হত্যার চুক্তি করেন। আনোয়ার হোসেন পরে তার সহযোগী মিঠু ও জিল্লুকে সাথে যুক্ত করে।
চুক্তি অনুযায়ী ২৭ জুন শুক্রবার সকালে ফেরদৌসী বেগমকে বাড়ির পাশের একটি নির্জন বাগানে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় এবং মরদেহ একটি সেফটি ট্যাংকে ফেলে রাখা হয়। নিখোঁজের পর নিহতের পরিবার থানায় সাধারণ ডায়েরি করে এবং বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরু করে।
বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার
মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকাল ৮টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরের একটি বাগানে সেপটিক ট্যাংক থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় মরদেহের সন্ধান পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে বুড়িচং থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে।
গ্রেফতার ও স্বীকারোক্তি
ঘটনার পর নিহতের ছেলে ইকরামুল হাসান বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রথমে নিহতের ঝা নুরজাহান বেগমকে আটক করে পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা হত্যার সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তাদের কাছ থেকে ফেরদৌসী বেগমের কানের দুল ও গলার চেইন উদ্ধার করা হয়।
বুধবার দুপুরে গ্রেফতারকৃতদের কুমিল্লা আদালতে হাজির করা হলে তারা হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালতের নির্দেশে তাদের কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
Tags
কুমিল্লা